বাংলাদেশে খ্রিস্টান ‘দাওয়া’ ও ধর্মান্তর কার্যক্রম

বাংলাদেশে খ্রিস্টান ‘দাওয়া’ কার্যক্রম বেশ শক্তিশালী। প্রচুর ফান্ডও আছে। সেই ফান্ড দিয়ে তারা মানুষের নিত্য সমস্যা সমাধানে কাজ করে। এতে প্রভাবিত হয়ে অনেকে খ্রিস্টান হয়। অন্যদিকে, দেশে প্রচুর সৌদি-আমিরাতি ফান্ডও আসে, সেসব দেয়া হয় মসজিদ/মাদ্রাসায় এবং এমন লোকদের যারা মুসলমানকে ‘কাফির’ বা ভ্রান্ত আকিদা ট্যাগ দিতে ব্যস্ত। ফলাফল হচ্ছে খ্রিস্টান হচ্ছে সংখ্যালঘু পাহাড়ী, সাঁওতালী, হিন্দু এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন।

প্রায় দুইশত বছরের খ্রিস্টান ব্রিটিশদের শাসনে ভারতীয়রা খ্রিস্টান হবার আগ্রহ তেমন একটা দেখায় নি। উপনিবেশিক শাসনের সময় খ্রিস্টান মিশনারীদের কাজের ফলাফল ছিল খুবই সীমিত।কিন্তু বর্তমান ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত রাজ্যগুলো  সহ (যেখানে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী বেশি ছিল)বেশ কয়েকটা রাজ্যে এখন খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ। কেন এই পিছিয়ে পরা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী শাসকগোষ্ঠী এবং সংখ্যাগুরুর ধর্মে ধর্মান্তরিত হল না? সুলতানী আমল থেকে শুরু করে মুঘল শাসনের সময় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ এটাকে শাসকের প্রভাব বা চাপ হিসেবে ‘অনুমান’ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, মুঘলরা শাসনচ্যুত হবার পর খ্রিস্টান উপনিবেশিক শাসনেও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর ঘটে চলছিল। বর্তমান ভারতে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও, এখনো ইসলাম ধর্মে কনভার্সন ঘটে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ইসলাম সংখ্যাগুরুর ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা ধর্মান্তরিত হচ্ছে সাবেক উপনিবেশিক শাসকের ধর্মেঃ খ্রিস্টানিতে। কেন? কেন তারা মুসলমান হয় না বাংলাদেশে বা হিন্দু হয় না ভারতে? আমার মতে, ভারত ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও এর কারন একই। মজলুম কখনো জালেম শাসকের ধর্ম গ্রহণ করে না। দুনিয়ার কোথাও এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নাই। বাংলাদেশ ও ভারতের শাসকগোষ্ঠী নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কাছে মোটাদাগে জালেম। জালেমের বিরুদ্ধে তারা এমন এক ধর্মকে গ্রহণ করছে, যে ধর্মের রয়েছে আন্তর্জাতিক সংযোগ, রয়েছে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর সাথে ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ। এই ধর্মান্তর তাদেরকে দিচ্ছে প্রতিরোধের নতুন পরিভাষা ও নতুন আত্মপরিচয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *